নতুন করোনাভাইরাস চীনে এক দিনেই কেড়ে নিয়েছে শত মানুষের প্রাণ; সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
তবে এ ভাইরাসে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমে এসেছে। কিছু এলাকায় চলাফেরায় কড়াকড়ি শিথিল করায় আতঙ্ক নিয়েই বিভিন্ন দপ্তর ও কারখানায় কাজে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ।
দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার একদিনেই এ ভাইরাসে মারা গেছেন ১০৮ জন; তাদের মধ্যে ১০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে হুবেই প্রদেশে।
গত বছরের শেষ দিন এই হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম এ ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি ধরা পড়ার পর থেকে এক দিনে এত বেশি মৃত্যুর খবর আর আসেনি।
সব মিলিয়ে চীনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০১৬ জনে। আর চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে এ পর্যন্ত ফিলিপিন্স ও হংকংয়ে দুই চীনা নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে নতুন এ ভাইরাসে, যাকে বলা হচ্ছে নভেল করোনাভাইরাস।
চীনের মূল ভূখণ্ডে এ পর্যন্ত যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে একজন জাপানি ও একজন মার্কিন নাগরিক রয়েছেন, বাকিরা সবাই চীনা নাগরিক।
সোমবার নতুন ২৪৭৮ জনের মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় চীনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৬৩৮ জনে।
চীনের বাইরে অন্তত ২৫টি দেশে আড়াইশর বেশি মানুষের দেহে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে তথ্য দিয়েছে সিএনএন।
সিঙ্গাপুরপ্রবাসী এক বাংলাদেশির শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ায় গত রোববার তাকে নেওয়া হয়েছে আইসোলেশন ইউনিটে। তবে বাংলাদেশে কারও মধ্যে অথবা চীনে অবস্থানরত কোনো বাংলাদেশির মধ্যে এ ভাইরাস সংক্রমণের খবর আসেনি এখনও।
বিভিন্ন দেশে মানুষ থেকে মানুষে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর আসতে থাকায় গত ৩০ জানুয়ারি এ ভাইরাস নিয়ে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রাথমিক উপসর্গ হয় ফ্লু বা নিউমোনিয়ার মত। কিন্তু বয়স্ক এবং অন্য অসুস্থতা থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ সংক্রামক রোগ হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী। এর কোনো প্রতিষেধকও মানুষের জানা নেই।
আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে যেসব উপসর্গ দেখা দেয়, সাধারণভাবে সেগুলো সারানোর জন্যই চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। অবস্থা গুরুতর হলে নেওয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৯৯৬ জন ভালো হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
আক্রান্তের সংখ্যার দিক দিয়ে এবারের করোনাভাইরাস ফেব্রুয়ারির শুরুতেই ছাড়িয়ে গিয়েছিল ২০০২-০৩ সালেন সার্সের প্রাদুর্ভাবকে। গত শনিবার ছাডিয়ে গেছে মৃত্যুর সংখ্যার দিক দিয়েও।
২০০২-০৩ সালে করোনাভাইরাস পরিবারের আরেক সদস্য সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোমে (সার্স) মৃত্যু হয়েছিল সব মিলিয়ে ৭৭৪ জনের। সার্স সে সময় ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বের দুই ডজন দেশে; আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ১০০ জনের কাছাকাছি।